অন্যান্য

রহস্যে ঘেরা পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত জায়গা

অন্যান্য সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৩:০০

পৃথিবীর রহস্যের অন্ত নেই, প্রাকৃতিক প্রাচুর্যপূর্ণ এই পৃথিবীতে অবাক হওয়ার মত অনেক বিষয়ই রয়েছে। এই সুন্দর পৃথিবীর সর্বত্র মানুষের বিচরন, অজানাকে জানা, নতুন আবিষ্কারের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের এতো উন্নতির পরেও এখনো কিছু কিছু স্থান রয়েগেছে যার ব্যাখ্যা মানুষ নানান চেষ্টা করেও বের করতে পারেনি আজো। এসব স্থান আমাদের কাছে রহস্যেঘেরা। রহস্যেঘেরা স্থান গুলো নিয়ে এখন মানুষের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা, জানার চেষ্টার কমতি নেই। তবু রহস্যে ঘেরা কিছু স্থান রয়ে যায়, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা জানে না এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যায়, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর সহস্য নিয়ে আমাদের সাইটে পূর্বের লেখাও রয়েছে।  তেমন আরো কয়েকটি রহস্যময় স্থান জেনে নেই আজকে-

জোন অব সাইলেন্স (Zone of Silence)

পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় জায়গার মধ্যে মেক্সিকোর জোন অব সাইলেন্স একটি অন্যতম রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু। মূলত মেক্সিকো মরুভূমির ধ্রুপদী নামই জোন অব সাইলেন্স বা নীরব ভূমি। এই নীরব মরুতে সব সময়ই অদ্ভূত ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এর চারিদিকে খুটখুটে অন্ধকার, রহস্যময় ভুতুড়ে পরিবেশ সেই সাথে রাতের গুমোট আঁধারে উল্কা বৃষ্টি নামে। সেখানে যদি কেউ টেপ রেকর্ডার বাজাতে থাকে তাহলে হঠাৎই সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এ এলাকায় চলন্ত গাড়ির স্টার্ট হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। এই অদ্ভূত সব আজব রহস্য আজো উন্মোচিত হয়নি। জোন অব সাইলেন্স ও কুখ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল একই অক্ষাংশে।

জোন অব সাইলেন্সের পাথরগুলো এমন ভুতুড়ে যে, কম্পাস পর্যন্ত অকেজো হয়ে যায়। এ এলাকার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পাইলটরা অভিযোগ করেন, তাদের সবকিছু কেমন যেনো বিভ্রান্তিকর মনে হয়। এখানকার দৈত্যকার ক্যাকটাস গাছগুলো দেখতে টকটকে লাল রঙ্গের। কিন্তু এই গাছই যখন এ এলাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলে। জোন অব সাইলেন্সের এমন অদ্ভূত ও ভয়ঙ্কর পরিবেশের কারণে কোনো মানুষ বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখেনি।  এই মরুভূমির নিকটবর্তী শহর সেবালোসের নাগরিকদের মধ্যে অনেকে এখানে ফ্লাইং সসার দেখেছে বলে দাবি করেছে। জোন অব সাইলেন্সকে ঘিরে আরো অনেকে অদ্ভূত সব ঘটনার কথা বলেছে। ১৯৭০ সালে ইউএস এয়ারফোর্স উটাহর গ্রিন রিভার থেকে ‘অ্যাহেনা' নামের একটি মিসাইল নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওই মিসাইলটি আসল জায়গায় না গিয়ে পড়ে ওই ভুতুড়ে মরুভূমিতে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউএস এয়ারফোর্সের মিসাইল সচরাচর লক্ষচ্যুত হতে দেখা যায় না। ইউএফও গবেষণাবিদ এবং লেখক ব্রাডস্টিগার এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর দুটি কারণ থাকতে পারে। হয় কোনো অজানা শক্তি মিসাইলটি ধ্বংস করেছে নতুবা কোনো ইউএফও তার আন্ডারগ্রাউন্ড বেস থেকে ওটাকে জোন অব সাইলেন্সে টেনে এনেছে। সাইলেন্স জোনের অদ্ভূত সব রহস্য গবেষকরা এখনো উদঘাটন করতে সমর্থ হয়নি। তবে তারা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে হয়তো একদিন সাইলেন্স জোনের অজানা রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

ড্যান্সিং ফরেস্ট (Crooked Forest, Poland)

পোল্যান্ডে অবস্থিত ক্রকড ফরেস্ট দেখলে মনে হয় যেন গাছগুলো নৃত্যের বেশ ধরে দাড়িয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। ক্রকড ফরেস্ট সেখানকার এমন অদ্ভুত আকৃতির দাঁড়িয়ে থাকা গাছের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেখানকার গাছের আকৃতি দেখে সকলের চোখ মাথায় ওঠার উপক্রম হয়। নানান রকম প্রচলিত কথা আছে ড্যান্সিং ফরেস্টকে নিয়ে। কেউ মনে করেন, মাটির গঠনের কারণে এখানকার গাছেরা অদ্ভুত অবয়ব নেয়। আবার কেউ মনে করেন, এখানকার আবহাওয়া পজেটিভ এবং নেগেটিভ উভয় প্রকার এনার্জি বিরাজ করে। যার দ্বন্দ্বের কারণে এমনটা ঘটে। তবে সবচেয়ে স্বীকৃত মত হচ্ছে, সমুদ্রতীরবর্তী বনটির সারাক্ষণ শক্তিশালী বাতাসের সাথে লড়াই। এই বাতাসের কারণেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এমন বাঁকিয়ে যায় তারা।

 জঙ্গলটি সিজারনোও গ্রামের পাশে অবস্থিত। জঙ্গলের গাছগুলোর বিশেষত্ব হলো, গাছগুলো নিচ থেকে সমকোণে অর্থ্যাৎ ৯০ ডিগ্রী বেঁকে যায়। কিছু গাছ আবার মাটির একদিকে ঝুঁকে আবার অন্যদিকে ঘুরে সোজাভাবে লম্বা হতে থাকে। আর এ কারণে গাছের গোড়া ধনুকের মতো আকৃতি ধারন করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো সব গাছগুলো একদিকে ঝুঁকে রয়েছে।

গাছগুলো দেখে মনে হয়ে যেন তারা কোনো নৃত্যের মুদ্রারত অবস্থায় রয়েছে। আর সে কারণেই জঙ্গলটিকে ড্যান্সিং ফরেস্ট বলা হয়। এই জঙ্গলে ১৯৩০ সালে গাছগুলো রোপিত হয়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে লাগানো গাছগুলো আবার স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়। তবে ১৯৩০ সালে গাছগুলো কীভাবে রোপন করা হয়েছিলো সে তথ্য অবশ্য কারো জানা নেই। রহস্যময় হলেও জঙ্গলটি দেখতে অসাধারণ। এছাড়াও জঙ্গলটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির সব গাছপালা। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত জঙ্গলটি। স্থানীদের মতে, মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই গাছগুলো বেঁকে গেছে। তবে ঠিক কোন কারণে গাছগুলো এভাবে আছে সে রহস্য আজো ভেদ হয়নি।

ডেভিলস কেটেল (Devil's Kettle Falls)

রহস্যময় ঝরনা ডেভিলস কেটেল।  যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিয়ার লেকের উত্তর দিকে এই রহস্যময় ঝর্ণা অবস্থিত। যার পানি কোথায় যায় তা কেউ জানেনা। এই রহস্য ভেদ করতে অনেক চেষ্টা করা হলেও এর রহস্য আজও অজানা রয়ে গেছে।  এই ঝর্ণাটি মিনেসোটা স্টেটের জাজ ম্যাগনি স্টেট পার্কে অবস্থিত। এর নাম ডেভিলস কেটেল  যার অর্থ হলো শয়তানের গর্ত। ঝর্ণাটির উৎস নদী হচ্ছে ব্রুল নদী। ঝর্ণাটি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দুইভাগে ভাগ হয়ে ঝর্ণার পানি দুদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিছে গড়ায়ে পড়ছে। পূর্ব দিকের প্রবাহটি গতাণুগতিক ঝর্ণার মত করে নিচে এসে পরে। কিন্তু পশ্চিম দিকের ঝর্ণার অংশটি নিচে না পরে একটি ছোট গর্তের মধ্যে পরে। সবই ঠিক ছিলো, কিন্তু এই গর্তে এতো দীর্ঘিকাল ধরে পানি পড়েই যাচ্ছে, এই গর্ত কখনো পূর্ণ হচ্ছেনা, এমনকি ঝর্ণার পানিগুলো কোথাও গড়িয়ে যেতেও দেখা যাচ্ছেনা।

ঝর্ণার পানি নির্দিষ্ট ওই গর্তেই মিলিয়ে যায়। তবুও গর্ত কখনো ভরেনা। তাহলে এই গর্তে প্রত্যেক মিনিটে পড়া লাখ লাখ লিটার পানি কোথায় যায় এ প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি।

কয়েক দশক আগেও অনেকের ধারণা ছিলো এই গর্তের অনেক গভীরে ছোট ছোট ছিদ্র বা ফাটল রয়েছে। সকলের ধারনা, ওই ফাটল দিয়ে পানি পাশের ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিশে যায়। তবে এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিলবে ওই পানীয় যাতে রঙিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ওই পানি যখন আরেক ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিশবে তখন উক্ত পানির রঙও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার পানির সঙ্গে লাখ লাখ টন রং মেশানো হয়। কিন্তু সকলেই অবাক হয়ে যায়! কারণ রঙিন পানি উক্ত গর্তেই বিলীন হয়ে গেছে এই দেখে। অন্যদিকে, পাশের ঝর্ণার এক ফোটা পানিও রঙিন হয়নি। আরো অনেক পদ্ধতিতে এই ঝর্ণার পানির গন্তব্য স্থল জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও এর রহস্য ভেদ হয়নি।


হেসদালেন লাইট (Hessdalen lights)

নরওয়ের হেসদালেন ঘাঁটিতে রাতে জ্বলে ওঠা এই আলোর রহস্য ১৯৩০ সাল থেকে এখানো অজানাই রয়ে গেছে। এই আলো শুধুমাত্র নরওয়ে দেশটির রাতের আকাশে ফুটে ওঠে। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম এরকম আলো প্রথম আকাশে দেখা যায়। এরপর থেকে একেক সময় একেক রঙের আলো আকাশে ফুটেছে। বছরে ১০ থেকে ১৫ বার এই আলো দেখা যায়। যদিও সেসব আলো আকাশে কয়েক মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ঘন্টাব্যাপী দেখা যায়। আরেকটি অবাক করা বিষয় হলো, যেদিন রাতেই আকাশে আলো ছড়ায় ঠিক ওই রাতেই আশেপাশের জমিতে ক্রপসার্কেল তৈরি হয়। এটি হলো ফসল কেটে অথবা নষ্ট করে তৈরি করা একটি বিশেষ ডিজাইন। এর থেকেই নরওয়েবাসীর ধারনা, এই আলোগুলো নিশ্চয়ই এলিয়েনদের বাহন থেকে আসে। আর ওই ক্রপসার্কেলগুলো তাদেরই তৈরি।

https://www.atlasobscura.com/articles/exploring-mexicos-zone-of-silence-where-radio-signals-fail-and-meteorites-crash

https://mysteriousfacts.com/crooked-forest-in-western-poland/

https://www.mnn.com/lifestyle/eco-tourism/stories/the-mystery-of-devils-kettle-falls
লেখকঃ এস এম সজীব